গ্রাম আদালতের এখতিয়ার
গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ ১৯৭৬ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতে ফৌজিদারী ও দেওয়ানী এ দু'প্রকার মামলার বিচার হতে পারে৷
ফৌজদারী বিষয়সমূহ
§বেআইনীজনতার সদস্য হওয়া বা দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত (বে-আইনী) জনতার সদস্যসংখ্যা ১০ বা তার কম হতে হবে (ধারা ১৪৩ ও ১৪৭ দঃ বিঃ), সাধারণ আঘাত, অপরাধজনক অনধিকার প্রবেশ, ক্ষতিকারক কাজ, ক্ষতির পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫,০০০টাকা (ধারা ৩১২, ৪২৭ ও ৪৪৭ দঃ বিঃ) হাতাহাতি, বে-আইনি অবরোধ, অবৈধ শক্তিপ্রয়োগ, অবৈধ ভয়ভীতি প্রদর্শন, মাদকাসক্তি, ইঙ্গিতের মাধ্যমে নারীরশ্লীলতাহানি ইত্যাদি (ধারা ১৬, ৩৩৪, ৩৪১, ৩৪২, ৩৫৮, ৫০৪ (১ম ভাগ), ৫০৮, ৫০৯ও ৫১০ দঃ বিঃ);
§সকল ধরনের চুরি (চুরিকৃত মূল্যের পরিমাণ ৫,০০০ টাকা বা তার কম হলে (ধারা ৪৭৯, ৩৮৫ ও ৩৮১ দঃ বিঃ);
§অস্থাবর সম্পদ আত্মসাত, বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা, দলিলাদির ধ্বংস সাধন (ধারা ৪০৩, ৪০৬, ৪১৭ ও৪২০ দঃ বিঃ)৷
দেওয়ানী বিষয়সমূহ
§চুরির টাকা আদায়ের মামলা
§অস্থাবর সম্পত্তি উদ্ধার বা তার মূল্য আদাযের মামলা
§দখল হারানোর এক বছরের মধ্যে স্থাবর সম্পত্তি দখল উদ্ধারের মামলা
§ধ্বংসকৃত অস্থায়ী জিনিসপত্রের ক্ষতিপূরন আদায় সংক্রান্ত মামলা
§গবাদি পশুর অনধিকার প্রবেশের জন্য খেসারতের মামলা
§কতগুলো ক্ষেত্রে গ্রাম আদালত বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারে না, যেমন -
- অভিযুক্ত ব্যক্তি পূর্বে যদি কোনও উচ্চতর আদালত কর্তৃক দন্ডিত হয়ে থাকে
- যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির সম্পত্তি জড়িত থাকে
- বিদ্যমান কলহের ব্যাপারে কোনও সালিসের ব্যবস্থা করা হলে
- সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা কার্যরত কোনও সরকারী কর্মচারীর পক্ষ হয়ে থাকলে৷
অনেকে গ্রাম আদালত এবং সালিসী ব্যবস্থাকে এক করে ফেলে৷ গ্রাম আদালত এবংসালিসী ব্যবস্থা দু'টি ভিন্ন জিনিস৷ গ্রাম আদালতে দেওয়ানী এবং ফৌজদারী দুইধরনের বিচার করার ক্ষমতা রয়েছে৷ কিন্তু সালিসী ব্যবস্থায় শুধুমাত্রপারিবারিক সমস্যার (যেমন - ভরণপোষন, দেনমোহর, বহুবিবাহ ইত্যাদি) সমাধান করাহয়৷ সালিসী ব্যবস্থা যে কোন ব্যক্তি বা যে কোন সংস্থা করতে পারে৷
:-:সালিসী ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন:-:
কোর্ট ফি :
গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট মামলারআবেদন পত্র দায়ের করতে হবে৷ ফৌজদারী মামলা হলে দু'টাকার এবং দেওয়ানী মামলাহলে চার টাকা ফি লাগবে৷ দরখাস্তের সাথে ফি প্রদানের রসিদ দাখিল করতে হবে৷
গ্রাম আদালতের স্থান নির্বাচন
যে ইউনিয়নে এলাকার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সে ইউনিয়নে গ্রাম আদালত গঠিত হয়৷একটি ইউনিয়ন এলাকায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিন্তু বিবাদী অন্য ইউনিয়নের হলেস্ব-স্ব ইউনিয়ন হতে সদস্য মনোনয়ন দিতে পারেন৷
গ্রাম আদালতের ক্ষমতা
গ্রাম আদালত সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলা করতে পারে৷ দু'টি ক্ষেত্রে গ্রাম আদালত জরিমানা করতে পারে
প্রথমতঃ গ্রাম আদালত অবমাননার দায়ে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা জরিমানা৷
দ্বিতীয়তঃ রাষ্ট্রীয় গোপনীয় নয় এমন দলিল দাখিল করতে অস্বীকার বা সমন দিতে অস্বীকার করলে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা জরিমানা করতে পারে৷
গ্রাম আদালতের কার্যপদ্ধতি
গ্রাম আদালত কর্তৃক বিচারযোগ্য দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে ৪ টাকা ও ফৌজদারীমামলার ক্ষেত্রে ২ টাকা ফি দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট বিচারপ্রার্থী আবেদন করতে পারে৷ আবেদনপত্রে নিম্নে বর্ণিত বিবরণাদি থাকতে হবে:
§ইউনিয়ন পরিষদের নাম
§আবেদনকারীর নাম ও ঠিকানা
§বিবাদীর নাম ও ঠিকানা
§ইউনিয়ন পরিষদের নাম, যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে
§সালিশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ৷
গ্রাম আদালতের বিচার পদ্ধতি :
§আবেদনপত্র গৃহীত হলে তা ১ নম্বর ফরমে লিপিবদ্ধ করতে হয়৷ অভিযোগ অমূলক মনেহলে চেয়ারম্যান আবেদন নাকচ করে দিতে পারেন৷ নাকচের আদেশ অন্যায়ভাবে করাহলে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তি ৩০ দিনের মধ্যে সহকারী জজ/ম্যাজিস্ট্রেটের নিকটপুনঃবিবেচনার জন্য আবেদন করতে পারেন৷
§আবেদন গৃহীত হলে নির্দিষ্ট তারিখও সময়ে বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষকে উপস্থিত হতে চেয়ারম্যান সমন দেবেন৷ সমনব্যক্তিগতভাবে জারি করতে হবে, সমনের উল্টো পৃষ্ঠায় সমন প্রাপকের প্রাপ্তিসূচক স্বাক্ষর নিতে হবে৷ বিবাদীকে পাওয়া না গেলে সমনের এক প্রস্থ তার বাড়িরপ্রকাশ্য স্থানে টানিয়ে দিতে হবে এবং তাতে সমন জারি হয়েছে বলে গণ্য হবে৷
§সমন জারি এক সপ্তাহের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাদী এবং বিবাদী উভয়পক্ষকে তাদের সদস্য মনোনীত করতে বলবেন এবং মনোনীত সদস্য নিয়ে আদালত গঠিতহবে৷ আদালত গঠিত হওয়ার ৩ দিনের মধ্যে প্রতিপক্ষকে লিখিত আপত্তি দাখিল করতেবলবেন৷ লিখিত না দিলে মৌখিকভাবে বলতে বা তা লিপিবদ্ধ করতে হবে৷ নির্দষ্টদিনে আদালত বিচারে বসবে৷ শুনানি ৭ দিনের বেশি স্থগিত রাখা যাবে না৷
§আবেদনকারী নির্ধারিত তারিখে হাজির হতে ব্যর্থ হলে চেয়ারম্যান যদি মনে করেনআবেদনকারী অবহেলা করছে তাহলে তিনি আবেদন নাকচ করতে পারেন৷
§নাকচের ১০ দিনের মধ্যে পুনঃবহাল করে মামলার তারিখ নির্দিষ্ট করবেন৷
§অনুরূপভাবে বিবাদী অবহেলা করে অনুপস্থিত থাকলে চেয়ারম্যান মামলার শুনানিনিষ্পত্তি করবেন৷ এক্ষেত্রে ১০ দিনের মধ্যে বিবাদী আবেদন করলে মামলাটিপুনঃবহাল করে শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করবেন৷
গ্রাম আদালতের সিদ্ধান্ত
গ্রাম আদালতের রায় প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে হবে৷ সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত বা চারপঞ্চমাংশ ভোটে গৃহীত হলে তার বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে না৷ যদি দু-তৃতীয়াংশভোটে সিদ্ধান্ত হয়, তার বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে৷ সিদ্ধান্ত ঘোষণার ৩০ দিনেরমধ্যে যে কোনও পক্ষ ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে থানা ম্যাজিস্ট্রেট এবংদেওয়ানী মামলার মামলার ক্ষেত্রে সহকারী জজ (মুন্সেফ) এর আদালতে আপীল করতেপারবেন৷
জরিমানা আদায়
আদালত অবমাননা ওইচ্ছাকৃতভাবে সমন অমান্য করার জন্য জরিমানা হলে অথবা জরিমানার অর্থ পরিশোধকরতে অস্বীকার করলে নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হবার পর তথ্য উল্লেখ করে থানাম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠালে তিনি তার নিজের কোর্টের রায় মনে করে তা আদায়করে দেবেন এবং অনাদায়ে জেল/জরিমানা হতে পারে৷ ক্ষতিপূরণের টাকা নির্দিষ্টসময় অতিবাহিত হওয়ার পর বকেয়া টাকা হিসাবে আদায় করা হবে৷
গ্রাম আদালতের বিধিমালা
গ্রাম আদালতের বিধিমালা, ১৯৭৬
------------------------------------------------------------------
বিধি-১ (সংক্ষিপ্ত নাম ও প্রারম্ভ)
অত্র বিধিমালা ১৯৭৬ সনের গ্রাম আদালত বিধিমালা নামে অভিহিত হইবে ।
বিধি-২ ( বিষয়বস্তু বা প্রসংগে বিপরীত কিছু না থাকিলে অত্র বিধিমালায় )
(ক) ''ফরম'' বলিতে অত্র বিধিমালার সহিত সংযোজিত ফরম বুঝাইবে ।
(খ) ''অধ্যাদেশ'' বলিতে ১৯৭৬ সনের গ্রাম আদালত ''অধ্যাদেশ (১৯৭৬ সনের ৬১ নং অধ্যাদেশ) বুঝাইবে;
(গ) 'খণ্ড'বলিতে অধ্যাদেশের তফসিলের কোনো খণ্ড বুঝাইবে;
(ঘ) ''আবেদনকারী'' বলিতে যে ব্যক্তি অধ্যাদেশের ৪ ধারা অনুসারে কোনো দরখাস্ত করে, তাহাকে বুঝাইবে;
(ঙ) ''প্রতিবাদী'' বলিতে যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেহ অধ্যাদেশের ৪ ধারা অনুসারে কোনো দরখাস্ত করে, তাহাকে বুঝাইবে; এবং
(চ) 'ধারা'বলিতে অধ্যাদেশের কোনো ধারা বুঝাইবে ।
বিধি-৩ :(১) ৪ ধারার (১) উপধারা অনুসারে কোনোদরখাস্ত লিখিতভাবে করিতে হইবে এবং উহা আবেদনকারী কতৃর্ক স্বাক্ষরিত হইবে ওইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট দাখিল করিতে হইবে ।
(২) উপবিধি (১) অনুসারে লিখিত দরখাস্তে নিম্নলিখিত বিবরণগুলি থাকিতে হইবে; যথাঃ
(ক)যে ইউনিয়ন পরিষদে দরখাস্ত করা হইতেছে উহার নাম;
(খ)আবেদনকারীর নাম, পরিচয় ও বাসস্থান;
(গ)প্রতিবাদীর নাম, পরিচয় ও বাসস্থান;
(ঘ)যে ইউনিয়নে অপরাধ সংঘটিত বা নালিশের কারণ উদ্ভব হইয়াছে উহার নাম;
(ঙ)নালিশ অথবা দাবির প্রকৃতি ও তায়দাদ, সংক্ষিপ্ত বর্ণনাসহ; এবং
(চ)যেই সমস্ত প্রতিকার দাবি করা হইতেছে ।
(৩) এই বিধি অনুসারে দরখাস্ত তফসিলের প্রথম খন্ড সংক্রান্ত হইলে দুইটাকা ফী এবং দ্বিতীয় খণ্ড সংক্রান্ত হইলে চার টাকা ফী দরখাস্তের সহিত দাখিলকরিতে হইবে ।
বিধি-৪ :ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যখন ৪ ধারার (১)উপধারা অনুসারে দরখাস্ত প্রত্যাখ্যান করিবেন, তখন উহার উপর প্রদত্ত আদেশসহকারে দরখাস্তটি আবেদনকারীর নিকট ফেরত দিতে হইবে ।
বিধি-৫ :(১) প্রত্যাখ্যানের তারিখ হইতে ৩০ দিনের মধ্যে৪ ধারার (২) উপধারা অনুসারে রিভিশনের দরখাস্ত এখতিয়ারসম্পন্ন সহকারী জজ-এরনিকট দাখিল করিতে হইবে ।
(২) উপবিধি (১) অনুসারে দরখাস্ত লিখিত ও বাদী কতৃর্ক স্বাক্ষরিত হইতেহইবে । উহাতে পক্ষগণের নাম, বিবরণ ও ঠিকানা থাকিতে হইবে এবং ইউনিয়ন পরিষদেরচেয়ারম্যান যে মূল দরখাস্ত প্রত্যাখান করিয়া ফেরত দিয়াছিলেন তাহাও এইদরখাস্তের সহিত দাখিল করিতে হইবে । যেই সকল হেতুবাদে রিভিশন দরখাস্ত করাহইতেছে, সংক্ষেপে তাহাও দরখাস্তে উল্লেখ করিতে হইবে ।
বিধি-৬ :যে সহকারী জজের নিকটে ৪ ধারার (২) উপধারাঅনুসারে দরখাস্ত করা হইবে, তিনি যদি এইরূপ অভিমত পোষণ করেন যে, ইউনিয়নপরিষদের চেয়ারম্যান কতৃর্ক প্রদত্ত আদেশটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত বা বহুলাংশেঅন্যায়, তবে তিনি দরখাস্ত গ্রহণ করার জন্য চেয়ারম্যানের প্রতি নির্র্দেশসম্বলিত লিখিত আদেশ দান করিবেন এবং অনুরূপ আদেশসহ আবেদনকারীকে উহা ফেরতদিবেন ।
বিধি-৭ :(১) আবেদন গৃহীত হইলে ১নং ফরমে রক্ষিতরেজিস্টারে উহার বিবরণসমূহ লিপিবদ্ধ করিতে হইবে এবং উক্ত রেজিস্টারে মামলারযে নম্বর ও বত্সর লিপিবদ্ধ হইবে, তাহা দরখাস্তের উপরেও লিখিতে হইবে ।
(২) যখন ৮ ধারার (২) উপধারা অনুসারে থানা ম্যাজিস্ট্রেট বা সহকারী জজকোন মামলা পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাইবেন, তখন তাহা ১নং ফরম রেজিস্টারেনূতন করিয়া তালিকাভুক্ত করিতে হইবে এবং নূতন মামলা হিসাবে উহার শুনানিকরিতে হইবে ।
বিধি-৮ :(১) ৭ বিধি অনুসারে দরখাস্ত রেজিস্ট্রিকরিবার পর চেয়ারম্যান একটি নির্দিষ্ট তারিখে ও সময়ে হাজির হওয়ার জন্যআবেদনকারীকে নির্দেশ দিবেন এবং উক্ত নির্দিষ্ট তারিখে ও সময়ে হাজির হওয়ারজন্য প্রতিবাদীকে সমন দিবেন ।
(২) এই বিধিমালা অনুসারে প্রদত্ত সকল সমন দুই প্রস্থে লিখিত এবং ইউনিয়নপরিষদের চেয়ারম্যান কতৃর্ক স্বাক্ষরিত ও সীলমোহরাঙ্কিত হইকে হইবে, এবংগ্রাম আদালত গঠিত হওয়ার পর গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান কতৃর্ক স্বাক্ষরিত ওসীলমোহরাঙ্কিত হইতে হইবে ।
(৩) যেক্ষেত্রে অন্যরূপ বিধান করা হইবে তদ্ব্যতীত সকল ক্ষেত্রে অত্রবিধিমালা অনুসারে প্রদত্ত প্রত্যেকটি সমন ইউনিয়ন পরিষদের একজন কমচারীকতৃর্ক অথবা ইউনিয়ন পরিষদ বা গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান কতৃর্ক এতদুদ্দেশ্যেনিযুক্ত কোনো ব্যক্তি কতৃর্ক জারিকৃত হইতে হইবে ।
(৪) সমন দ্বারা যে ব্যক্তিকে আহবান করা হইয়াছে, সম্ভব হইলেব্যক্তিগতভাবে সেই ব্যক্তির হাতে দুই প্রস্থ সমনের এক প্রস্থ অর্পণেরদ্বারা সমন জারি করিতে হইবে ।
(৫) যাহার উপর সমন জারি করা হইবে, সেইরূপ প্রত্যেক ব্যক্তি সমনের অপরপ্রস্থের বিপরীত পৃষ্ঠায় স্বাক্ষরের দ্বারা প্রাপ্তি স্বীকার করিবে ।
(৬) যথারীতি চেষ্টা করিয়াও যদি উপরোক্ত উপধারাসমূহের বর্ণিত উপায়ে সমনজারি করা সম্ভব না হয়, তাহা হইলে সমন প্রাপক যে গৃহে সচরাচর বসবাস করে, সমনজারি কারক কর্মচারী সেই গৃহের কোনো প্রকাশ্য অংশ এক প্রস্থ সমন লটকাইয়াদিবে এবং তদ্বারা সমন যথাবিহিতরূপে জারি হইয়াছে বলিয়া বিবেচিত হইবে ।
(৭) যে ব্যক্তির নামে সমন দেওয়া হইয়াছে, সেই ব্যক্তি যদি সেই ইউনিয়নপরিষদের এখতিয়ার বহির্ভুত স্থানে বসবাস করে তবে ইউনিয়ন পরিষদের বা গ্রামআদালতের চেয়ারম্যান ডাকযোগে (প্রাপ্তি স্বীকারের খরচসহ) রেজিস্ট্রি করিয়াসমন জারি করাইতে পারিবে এবং আবেদনকারীকে উহার খরচ বহন করিতে হইবে ।
বিধি-৯ :(১) প্রতিবাদীর প্রতি সমন ২নং ফরমে দিতে হইবে ।
(২) সাক্ষীর প্রতি সমন ৩নং ফরমে দিতে হইবে ।
বিধি-১০ :প্রতিবাদীর উপর সমন জারি হইবার পর ইউনিয়নপরিষদের চেয়ারম্যান পক্ষগণকে সাত দিনের মধ্যে তাহাদের সদস্য মনোনয়ন করিতেবলিবে, এবং অনুরূপভাবে মনোনীত সদস্যবৃন্দ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকেলইয়া গ্রাম আদালত গঠিত হইবে ।
বিধি-১১ :সদস্যগণের নাম প্রাপ্ত হইবার পর ইউনিয়নপরিষদের চেয়ারম্যান ১নং ফরমের রেজিস্টারের সংক্ষিপ্ত কলামে উক্ত সদস্যগণেরনাম লিপিবদ্ধ করিবে ।
বিধি-১২:(১) যেক্ষেত্রে গ্রাম আদালত কোনো মামলা কোনোমামলার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পূর্বে যেকোনো সময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ৫ধারার (২) উপধারায় বর্ণিত কোনো কারণে গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান হিসাবে কাজকরিতে অপরাগ হয়, অথবা কোনো পক্ষ তাহার নিরপেক্ষতা সম্পর্কে প্রশ্নউত্থাপন করে, সেই ক্ষেত্রে থানা নির্বাহী অফিসার, ইউনিয়ন পরিষদেরচেয়ারম্যানের নিকট হইতে সংবাদ পাইলে অথবা কোনো পক্ষের নিকট হইতে লিখিতদরখাস্ত পাইলে গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান হিসাবে কাজ করার জন্য ইউনিয়নপরিষদের যেকোনো সদস্যকে কোনো পক্ষ যে সদস্যকে তদীয় সদস্যরূপে মনোনীতকরিয়াছে সেই সদস্য (ব্যতীত) নিযুক্ত করিতে পারিবেন ।
(২) উপবিধি (১) অনুসারে গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান নিযুক্ত না হওয়াপর্যন্ত থানা নির্বাহী অফিসার গ্রাম আদালতের কার্যক্রম স্থগিত রাখিতেপারিবেন ।
(৩) উপবিধি (১) অনুসারে নিযুক্ত গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যানের নাম ১নং ফরম রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করিতে হইবে ।
বিধি-১৩ :গ্রাম আদালত গঠিত হইবার পর গ্রাম আদালতেরচেয়ারম্যান তিন দিনের মধ্যে দরখাস্তের বিরুদ্ধে লিখিত আপত্তি দাখিল করারজন্য প্রতিবাদীকে নির্দেশ দিবেন এবং গ্রাম আদালতের অধিবেশন অনুষ্ঠানের জন্যএকটি দিন সময় ও স্থান ধার্য করিবেন এবং পক্ষগণকে নিজ নিজ বক্তব্যেরসমর্থনে প্রযোজনীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করার নির্দেশ দিতে পারিবেন ।
বিধি-১৪:(১) গ্রাম আদালত ১৩ বিধি অনুসারে ধার্য তারিখেমামলার বিচার করিবে, কিন্তু উপযুক্ত কারণে আদালত বিভিন্ন সময়ে মামলারশুনানি মুলতবী করিতে পারিবে, তবে একেবারে অনুরূপ মুলতবীর মেয়াদ সাত দিনেরঅধিক হইবে না ।
(২) গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান সাক্ষীগণকে হলফ বা শপথ করিয়া জবানবন্দিকরিতে বলিবেন এবং জবানবন্দির সারমর্ম লিপিবদ্ধ করিবেন বা করাইবেন ।
(৩) গ্রাম আদালত কোনো বিষয় সম্পর্কে পক্ষগণের মধ্যে বিরোধের ব্যাপারেমামলার যেকোনো পর্যায়ে সরেজমিনে তদন্ত অনুষ্ঠান করিতে পারিবে ।
বিধি-১৫ :(১) যদি কোনো মামলায় ইউনিয়ন পরিষদেরচেয়ারম্যানের নিকট হাজির হওয়ার জন্য নির্ধারিত তারিখে, অথবা গ্রাম আদালতেমামলার শুনানির জন্য নির্ধারিত তারিখে বাদী হাজির না হয়, এবং ইউনিয়নপরিষদের বা গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান যদি এইরূপ মত পোষণ করেন যে, বাদীতাহার মামলা পরিচালনায় গাফিলতি করিতেছে তবে তাহার ত্রুটির জন্য দরখাস্তখারিজ করা হইবে ।
(২) যেক্ষেত্রে উপবিধি (১) অনুসারে দরখাস্ত খারিজ হয়, সেইক্ষেত্রে মামলাপুনর্বহাল করার জন্য বাদী মামলা খারিজের তারিখ হইতে ১০ দিনের মধ্যে ইউনিয়নপরিষদের বা গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যানের নিকট লিখিতভাবে আবেদন করিতেপারিবে, এবং উক্ত চেয়ারম্যান যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, আবেদনকারী হাজিরনা হওয়ার উপযুক্ত কারণ ছিল এবং সে অবেহলার সহিত কাজ করেন নাই, তবেচেয়ারম্যান আবেদনকারীর দরখাস্ত পুনর্বহাল করিতে ও উহা শুনানির জন্য একটিতারিখ ধার্য করিতে পারিবেন ।
বিধি-১৬ :(১) যদি কোনো মামলা গ্রাম আদালতে শুনানিরজন্য ধার্য তারিখে প্রতিবাদী হাজির না হয়, এবং গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যানযদি এইরূপ মত পোষণ করেন যে, সে গাফিলতি করিয়াছে, তবে প্রতিবাদীরঅনুপস্থিতিতেই মামলার শুনানি করিয়া নিষ্পত্তি করা হইবে ।
(২) যেক্ষেত্রে কোনো মামলায় উপবিধি (১) অনুসারে প্রতিবাদীরঅনুপস্থিতিতেই শুনানি অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রতিবাদীর বিরুদ্ধে নিষ্পত্তি হয়, সেই ক্ষেত্রে প্রতিবাদী মামলা পুনর্বহাল করার জন্য উক্ত সিদ্ধান্তের তারিখহইতে ১০ দিনের মধ্যে গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যানের নিকট লিখিতভাবে আবেদনকরিতে পারিবে, এবং চেয়ারম্যান যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, তাহার হাজির নাহওয়ার উপযুক্ত কারণ ছিল এবং সে অবহেলার সহিত কাজ করে নাই, তবে চেয়ারম্যানমামলা পুনর্বহাল করিতে ও উহার শুনানির জন্য একটি তারিখ ধার্য করিতে পারিবেন।
বিধি-১৭ :(১) গ্রাম আদালতের সিদ্ধান্ত আদালতের চেয়ারম্যান ১নং ফরম রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করিবেন ।
(২) উপবিধি (১) অনুসারে লিপিবদ্ধ প্রত্যেকটি সিদ্ধান্তে উল্লেখ থাকিবেযে, সিদ্ধান্তটি সর্বসম্মত কিনা, এবং যদি সর্বসম্মত না হয়, তবে যেসংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুপাতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হইয়াছে, উহার উল্লেখ থাকিবে ।
বিধি-১৮ :গ্রাম আদালতের প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত আদালতের চেয়ারম্যান প্রকাশ্য আদালতে গোষণা করিবেন ।
বিধি-১৯ :(১) ৮ ধারার (২) উপধারা অনুসারে দরখাস্তলিখিত হইতে হইবে, আবেদনকারী কতৃর্ক স্বাক্ষরিত হইতে হইবে, এবং তাহাতেপক্ষগণের নাম, বিবরণ ও ঠিকানা উল্লেখ করিতে হইবে, এবং তাহাতে পক্ষগণের নাম, বিবরণ ও ঠিকানা উল্লেখ করিতে হইবে এবং দরখাস্তের হেতুবাদগুলিও সংক্ষেপেউল্লেখ করিতে হইবে ।
(২) গ্রাম আদালতের প্রদত্ত ডিক্রি বা আদেশের একটি অনুলিপি আদালতেরচেয়ারম্যান কতৃর্ক সহিমোহরাঙ্কিত করিয়া দরখাস্তের সহিত সংযোজিত করিয়া দিতেহইবে ।
বিধি-২০ :প্রত্যেক মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর ৪নং ফরমেএকটি ডিক্রি প্রস্তুত করিতে হইবে এবং গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান কতৃর্ক তাহাস্বাক্ষরিত হইতে হইবে ।
বিধি-২১ :(১) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ৫নং ফরমে ডিক্রিসমূহের রেজিস্টারে বিবরণ লিপিবদ্ধ করিবেন ।
(২) ৮ ধারার (২) উপধারা অনুসারে থানা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সহকারী জজ যেআদেশ দান করিবেন, তাহা যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবগতকরা হইবে এবং তদনুসারে চেয়ারম্যান ডিক্রি আদেশ সংশোধন করিবেন এই সম্পর্কেপ্রয়োজনীয় বিষয় ৫নং ফরমে ডিক্রিসমূহের রেজিস্টারেও লিপিবদ্ধ করিবেন ।
বিধি-২২ :ডিক্রির টাকা বা ক্ষতিপূরণের টাকা কতদিনেরমধ্যে পরিশোধ করিতে হইবে, তাহা গ্রাম আদালতই স্থির করিবে । এই সময়ের মেয়াদকোনোক্রমেই চূড়ান্ত আদেশের তারিখ হইতে ছয় মাসের অধিক হইবে না ।
বিধি-২৩ :কোনো বিরোধের যে কোনো পক্ষের আবেদনক্রমেগ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান, অথবা যেক্ষেত্রে গ্রাম আদালত নাই, সেইক্ষেত্রেইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পঁচাত্তর পয়সা ফী আদায় করিয়া বিরোধ সম্পর্র্কেগ্রাম আদালতের নথিপত্র পরিদর্শন করিবার অনুমতি দান করিবেন ।
বিধি-২৪ :বিরোধের কোনো পক্ষের আবেদনক্রমে গ্রামআদালতের চেয়ারম্যান, অথবা যেক্ষেত্রে গ্রাম আদালত নাই, সেইক্ষেত্রে ইউনিয়নপরিষদের চেয়ারম্যান, প্রতি একশত শব্দ বা উহার অংশের অন্য পঞ্চাশ পয়সাহিসাবে আদায় করিয়া প্রাসংগিক কোনো নথি অথবা অত্র বিধিমালা অনুসারে রক্ষিতকোনো রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ কোনো বিষয়ের বা উহার অংশবিশেষের নকল সরবরাহকরিবেন ।
বিধি-২৫ :(১) যখনই ১০ বা ১১ ধারা অনুসারে ধার্য কোনোজরিমানা ১২ ধারা অনুসারে আদায় করা হয়, অথবা অত্র বিধিমালা অনুসারে কোনো ফীআদায় করা হয়, তখন ৬নং ফরমে উহার রশিদ দেওয়া হইবে, যাহাতে ক্রমিক নম্বরথাকিবে, এবং তাহার মুড়ি অংশ ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে রাখা হইবে ।
(২) অত্র বিধিমালা অনুসারে প্রাপ্ত সকল জরিমানা ও ফী ৭নং ফরমে একটি রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করা হইবে ।
বিধি-২৬ :অত্র বিধিমালা অনুসারে দেয় সকল ফী ইউনিয়ন পরিষদ তহবিলের অংশরূপে পরিগণিত হইবে ।
বিধি-২৭ :মামলার রেজিস্টার এবং ডিক্রি ও আদেশেররেজিস্টারে প্রতি বত্সর গৃহীত হওয়া দরখাস্তের ক্রমানুসারে ও প্রতি বত্সরপ্রদত্ত ডিক্রি বা আদেশের ক্রমানুসারে সেইগুলির ক্রমিক নম্বর দেওয়া হইবে ।
বিধি-২৮ :গ্রাম আদালতের রেজিস্টারসহ যাবতীয় নথিপত্রইউনিয়ন পরিষদ অফিসে জমা দেওয়া হইবে এবং রেজিস্টারসমূহ দশ বত্সর পর্যন্ত ওঅন্যান্য নথিপত্র তিন বত্সর পর্যন্ত সংরক্ষিত রাখা হইবে ।
বিধি-২৯ :যেক্ষেত্রে ৯ ধারা (৩) উপধারা অনুসারে কোনোঅর্থ আদায় করিতে হইবে, সেই ক্ষেত্রে বকেয়া ভূমি রাজস্ব হিসাবে উহা আদায়করার জন্য গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান ৮নং ফরমে উহার বিবরণ থানা নির্বাহীঅফিসের নিকট প্রেরণ করিবেন ।
বিধি-৩০: ১২ ধারার (১) উপধারা অনুসারে যে জরিমানা আদায়করিতে হইবে উহার পরিমাণ উল্লেখ করিয়া প্রদত্ত আদেশ ৯নং ফরমে থানাম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করিতে হইবে ।
বিধি-৩১ :ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রতি বত্সর পহেলাফেব্রুয়ারি ও পহেলা আগস্টের পূর্বে গ্রাম আদালতসমূহের যথাক্রমে ৩১শেডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাস এবং ৩০শে জুন পর্যন্ত ছয় মাসের কার্যাবলীর রিটার্ন১০নং ফরমে থানা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রেরণ করিবেন ।
বিধি-৩২ :যখন কোনো গ্রাম আদালত এইরূপ অভিমত পোষণ করেযে, উহার বিচারাধীন কোনো মামলার ন্যাবিচারের খাতিরে আসামীর শাস্তি হওয়াবাঞ্ছনীয়; তখন গ্রাম আদালত ১১নং ফরমে উক্ত মামলা ফৌজদারী আদালতে প্রেরণকরিতে পারিবে ।
বিধি-৩৩ :যখন সমন অনুসারে বা অন্যভাবে প্রতিবাদী হাজিরহইয়া আবেদনকারীর দাবি বা বিরোধ স্বীকার করে এবং ইউনিয়ন পরিষদেরচেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে দাবি মিটাইয়া দেয় তখন কোনো গ্রাম আদালত গঠন করাহইবে না ।
বিধি-৩৪ :যখন গ্রাম আদালত অথবা ইউনিয়ন পরিষদেরচেয়ারম্যান কোনো পক্ষকে দেয় কোনো অর্থ গ্রহণ করেন, তখন সংশ্লিষ্ট পক্ষেরআবেদনের তারিখ হইতে সম্ভব হইলে সাত দিনের মধ্যে সেই অর্থ তাহাকে প্রদানকরিতে হইবে ।
বিধি-৩৫ :(১) প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে গ্রামআদালতের একটি সীলমোহর রাখিতে হইবে, যাহা বৃত্তাকার হইবে এবং যাহাতে গ্রামআদালত কথাগুলিও ইউনিয়ন পরিষদের নাম অঙ্কিত থাকিবে ।
(২) অত্র বিধিমালা অনুসারে প্রদত্ত সকল সমন আদেশ ডিক্রি, নকল ও অন্যান্য কাগজপত্রে গ্রাম আদালতের সীলমোহর ব্যবহৃত হইবে ।